ব্রুনেইয়ের সংবিধানে ইসলামী আইন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনেই ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা লাভ করে। ব্রুনেই একটি রাজতান্ত্রিক ইসলামী দেশ। এর দাপ্তরিক নাম নেগারা ব্রুনেই দারুসসালাম। ব্রুনেইয়ের ৮২ শতাংশ মানুষ মুসলিম এবং ৭৪ শতাংশ মানুষ মালয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন আছে ব্রুনেইয়ের সংবিধানে। ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসান বলখিয়া মালয় ইসলামিক মোনার্কিকে (এমএইবি) জাতীয় দর্শন ঘোষণা করেছেন, যার মূলকথা হলো, ‘মালয় ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য; ইসলামী অনুশাসন, আইন ও মূল্যবোধ এবং রাজতন্ত্রের মিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি ব্যবস্থা, যা সবাই চর্চা করবে এবং যার প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল থাকবে।’
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করার সময় থেকেই ব্রুনেই এই নীতি অনুসরণ করে আসছে এবং তার যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে এর প্রতিফলন ঘটেছে। জাতীয় এই তিন মূলনীতি তথা মালয় সংস্কৃতি, ইসলামী অনুশাসন ও রাজতন্ত্র সামনে রেখেই ব্রুনেইয়ের সংবিধান রচিত হয়েছে।
তাতে মালয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, ইসলামী আইন ও মূল্যবোধ এবং রাজতন্ত্রের পরিপন্থী বিষয়গুলো পরিহার করা হয়েছে। ব্রুনেইয়ের সংবিধান ১৯৫৯ সালে রচিত। ২০০৪ ও ২০১৮ সালে তাতে সংশোধনী ও সংযোজন সংঘটিত হয়।
এখানে ব্রুনেইয়ের সংবিধানের সেই সব ধারা, উপধারা ও অনুচ্ছেদগুলো তুলে ধরা হলো, যাতে ইসলামী আইন ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে।
১. আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু : মহান আল্লাহর প্রশংসা (হামদ) ও মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে সংবিধানের শুরু করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়। সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য এবং আমাদের নেতা মুহাম্মদ (সা.), তার পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের ওপর আল্লাহর বরকত ও শান্তি বর্ষিত হোক।’
২. আল্লাহর রহমতে সুলতানের সার্বভৌমত্ব : সংবিধানের সূচনাপর্বে আল্লাহর রহমতের অধীনে ব্রুনেইয়ের সুলতানের সার্বভৌমত্ব ও তার পরিবারের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে।
৩. ধর্মাদর্শ : সংবিধানের প্রথম ভাগ, অনুচ্ছেদ-২-এর ধারা (C) -কে ‘ইসলাম ধর্ম’ কথার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘ইসলাম ধর্মের অর্থ হলো শাফেয়ি মাজহাব ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতাদর্শ অনুসারে ইসলামের অনুশীলন।
৪. রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম : সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ, অনুচ্ছেদ-৩-এর ধারা-১-এ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্রুনেই দারুসসালামের দাপ্তরিক ধর্ম হবে ইসলাম। তবে অন্য ধর্মের অনুসারী ব্যক্তিরা শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে তা পালন করতে পারবে।
৫. ধর্মীয় পর্ষদ : দ্বিতীয় ভাগ, অনুচ্ছেদ-৩-এর ধারা-৩-এ একটি ধর্মীয় পর্ষদের কথা বলা হয়েছে, যাদের দায়িত্ব হবে ইসলাম সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে সুলতানকে পরামর্শ দেওয়া।
৬. মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা মুসলিম হবেন : সংবিধানের তৃতীয় ভাগ, অনুচ্ছেদ-৪-এর ধারা-৫-এ বলা হয়েছে, মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়োগ দেওয়া হবে ইসলাম ধর্মের অনুসারী ও মালয় জাতি থেকে। তবে সুলতান ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখেন।
৭. সুলতানের উপদেষ্টা পদে মুফতি : চতুর্থ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৫-এর ধারা-২-এর উপধারা (C) -তে বলা হয়েছে, পদাধিকারবলে মুফতি কিরাজান (রাষ্ট্রের প্রধান মুফতি) ও শরয়ি আদালতের প্রধান সুলতানের উপদেষ্টা হবেন।
৮. ক্ষমা পর্ষদে মুফতি : চতুর্থ ভাগ (A), অনুচ্ছেদ-৮ (A)-এর ধারা-১-এ বলা হয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল ও মুফতি কিরাজানসহ সর্বোচ্চ তিন সদস্যের ক্ষমা পর্ষদ (Pardons Board) গঠন করা হবে।
৯. ক্ষমার আগে মুফতির মতামত : চতুর্থ ভাগ (A) , অনুচ্ছেদ-৮ (A)-এর ধারা-৫-এ বলা হয়েছে, কোনো বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার আগে ক্ষমা বোর্ড প্রযোজ্য আইন বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ইসলামী আইনের যেকোনো দিক সম্পর্কে মুফতি কিরাজান প্রদত্ত লিখিত মতামত বিবেচনা করবে।
১০. মুরতাদ আইন পরিষদের সদস্য হবে না : সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৩০-এর ধারা (E) -তে বলা হয়েছে, শরয়ি আইন অনুসারে কোনো মুরতাদ (ধর্মদ্রোহী) আইন পরিষদের সদস্য হতে পারবে না।
১১. ইসলামবিরোধী বিল উত্থাপন নয় : সপ্তম ভাগ, অনুচ্ছেদ-৪২-এর ধারা-১-এর উপধারা (E) -তে বলা হয়েছে, আইন পরিষদে এমন কোনো বিল, প্রস্তাব, সংশোধনী ও আলোচনা উত্থান করা যাবে না, যা জাতীয় দর্শন মালয় ইসলামিক মোনার্কির পরিপন্থী।
১২. আইন পরিষদে ধর্মবিরোধী আলোচনা নয় : সপ্তম ভাগ, অনুচ্ছেদ-৫৩-এর ধারা-১এ-এর উপধারা (A) -তে বলা হয়েছে, আইন পরিষদের কোনো সদস্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জাতীয় দর্শন মালয় ইসলামিক মোনার্কির পরিপন্থী কোনো বক্তব্য প্রদান বা মন্তব্য করতে পারবে না।
১৩. জাকাত ফান্ড কর আইনের অধীন নয় : অষ্টম ভাগ, অনুচ্ছেদ-৬৯-এ বলা হয়েছে, এই অংশের বিধানগুলো (কর সংক্রান্ত) ‘মুসলিম রেভিনিউজ অ্যান্ড ফান্ডস’-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সম্ভবত এর দ্বারা ধারা ও ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্দেশ্য।
১৪. স্পর্শকাতর দপ্তরে কেবল মুসলিম নিয়োগ : একাদশ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৮৪ -তে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের অনুসারী, মালয় জাতি ও ব্রুনেই দারুসসালামের নাগরিক না হলে তাকে তৃতীয় তফসিলে নির্দিষ্ট কোনো অফিসে নিয়োগ দেওয়া হবে না। তৃতীয় তফসিলে ১০টি দপ্তরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো—১. মহাহিসাব রক্ষক, ২. উপদেষ্টা পর্ষদ কর্মকর্তা, ৩. আইন পরিষদ কর্মকর্তা, ৪. প্রধান শরিয়া বিচারপতি, ৫. মুফতি কিরাজান, ৬. প্রধান আইন কর্মকর্তা, ৭. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, ৮. আদত ইস্তিদাত তথা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক দপ্তর, ৯. আইন পরিষদের স্পিকার ও ১০. মন্ত্রিপরিষদসচিব।
১৫. ইন্টারপ্রিটেশন ট্রাইব্যুনালে ইসলামী আইনজ্ঞ নিয়োগ : দ্বাদশ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৮৬-এর ধারা-৭, উপধারা (C) -তে বলা হয়েছে, ইন্টারপ্রিটেশন ট্রাইব্যুনাল তিন সদস্যের হবে, যার একজন হবেন এমন একজন, যার ইসলামী আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে অথবা যিনি ইসলামী আইন ও বিচার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন। এই ব্যক্তি যেকোনো দেশের নাগরিক হতে পারবেন।
১৬. আল্লাহর নামে শপথ : সংবিধানের তফসিল-১-এ উপদেষ্টা পরিষদ, উপদেষ্টা পর্ষদ কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপরিষদসচিব, মন্ত্রিপরিষদ, আইন পরিষদের সদস্য ও আইন পরিষদ কর্মকর্তাদের শপথের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে মুসলিম সদস্য ও কর্মকর্তাদের জন্য আল্লাহর নামে শপথ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যার আরবি উচ্চারণ হলো, ‘ওয়াল্লাহি ওয়া বিল্লাহি ওয়া তাল্লাহি’।
১৭. দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি : আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার মাধ্যমে সংবিধানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি সব প্রশংসার অধিকারী, যার নামগুলো সমুন্নত, যিনি সকল বাদশাহর বাদশাহ, তিনি তার রহমতের ধারা অব্যাহত রাখুন; তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন, তিনি এই সংবিধানের প্রতি চিরকালের জন্য অনুগ্রহ বর্ষণ করুন। কবুল করুন হে বিশ্বজগতের পালনকর্তা!’
১৮. অন্যান্য : সংবিধানের প্রথম ভাগে অনুচ্ছেদ-৭৭-এর আলোকে ‘দ্য রিলিজিয়াস কাউন্সিল অ্যান্ড কাদিস কোর্টস অ্যাক্ট’-এর অধীনে মুফতি কিরাজান নিয়োগ এবং ‘মুসলিম রেভিনিউজ অ্যান্ড ফান্ডস’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। ৭৭ অনুচ্ছেদে ইসলামী আদালত গঠন, ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও জাকাত ব্যবস্থাপনার ওপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্রুনেইয়ের সংবিধানের সংশোধিত সংস্করণ ২০১১ অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ, বন্দর সেরি বেগাওয়ান, ব্রুনেই। ছবি: সংগৃহীত
ব্রুনেইয়ের সংবিধানে ইসলামী আইন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনেই ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা লাভ করে। ব্রুনেই একটি রাজতান্ত্রিক ইসলামী দেশ। এর দাপ্তরিক নাম নেগারা ব্রুনেই দারুসসালাম। ব্রুনেইয়ের ৮২ শতাংশ মানুষ মুসলিম এবং ৭৪ শতাংশ মানুষ মালয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন আছে ব্রুনেইয়ের সংবিধানে। ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসান বলখিয়া মালয় ইসলামিক মোনার্কিকে (এমএইবি) জাতীয় দর্শন ঘোষণা করেছেন, যার মূলকথা হলো, ‘মালয় ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য; ইসলামী অনুশাসন, আইন ও মূল্যবোধ এবং রাজতন্ত্রের মিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি ব্যবস্থা, যা সবাই চর্চা করবে এবং যার প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল থাকবে।’
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করার সময় থেকেই ব্রুনেই এই নীতি অনুসরণ করে আসছে এবং তার যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে এর প্রতিফলন ঘটেছে। জাতীয় এই তিন মূলনীতি তথা মালয় সংস্কৃতি, ইসলামী অনুশাসন ও রাজতন্ত্র সামনে রেখেই ব্রুনেইয়ের সংবিধান রচিত হয়েছে।
তাতে মালয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, ইসলামী আইন ও মূল্যবোধ এবং রাজতন্ত্রের পরিপন্থী বিষয়গুলো পরিহার করা হয়েছে। ব্রুনেইয়ের সংবিধান ১৯৫৯ সালে রচিত। ২০০৪ ও ২০১৮ সালে তাতে সংশোধনী ও সংযোজন সংঘটিত হয়।
এখানে ব্রুনেইয়ের সংবিধানের সেই সব ধারা, উপধারা ও অনুচ্ছেদগুলো তুলে ধরা হলো, যাতে ইসলামী আইন ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে।
১. আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু : মহান আল্লাহর প্রশংসা (হামদ) ও মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে সংবিধানের শুরু করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়। সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য এবং আমাদের নেতা মুহাম্মদ (সা.), তার পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের ওপর আল্লাহর বরকত ও শান্তি বর্ষিত হোক।’
২. আল্লাহর রহমতে সুলতানের সার্বভৌমত্ব : সংবিধানের সূচনাপর্বে আল্লাহর রহমতের অধীনে ব্রুনেইয়ের সুলতানের সার্বভৌমত্ব ও তার পরিবারের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে।
৩. ধর্মাদর্শ : সংবিধানের প্রথম ভাগ, অনুচ্ছেদ-২-এর ধারা (C) -কে ‘ইসলাম ধর্ম’ কথার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘ইসলাম ধর্মের অর্থ হলো শাফেয়ি মাজহাব ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতাদর্শ অনুসারে ইসলামের অনুশীলন।
৪. রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম : সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ, অনুচ্ছেদ-৩-এর ধারা-১-এ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্রুনেই দারুসসালামের দাপ্তরিক ধর্ম হবে ইসলাম। তবে অন্য ধর্মের অনুসারী ব্যক্তিরা শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে তা পালন করতে পারবে।
৫. ধর্মীয় পর্ষদ : দ্বিতীয় ভাগ, অনুচ্ছেদ-৩-এর ধারা-৩-এ একটি ধর্মীয় পর্ষদের কথা বলা হয়েছে, যাদের দায়িত্ব হবে ইসলাম সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে সুলতানকে পরামর্শ দেওয়া।
৬. মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা মুসলিম হবেন : সংবিধানের তৃতীয় ভাগ, অনুচ্ছেদ-৪-এর ধারা-৫-এ বলা হয়েছে, মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়োগ দেওয়া হবে ইসলাম ধর্মের অনুসারী ও মালয় জাতি থেকে। তবে সুলতান ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখেন।
৭. সুলতানের উপদেষ্টা পদে মুফতি : চতুর্থ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৫-এর ধারা-২-এর উপধারা (C) -তে বলা হয়েছে, পদাধিকারবলে মুফতি কিরাজান (রাষ্ট্রের প্রধান মুফতি) ও শরয়ি আদালতের প্রধান সুলতানের উপদেষ্টা হবেন।
৮. ক্ষমা পর্ষদে মুফতি : চতুর্থ ভাগ (A), অনুচ্ছেদ-৮ (A)-এর ধারা-১-এ বলা হয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল ও মুফতি কিরাজানসহ সর্বোচ্চ তিন সদস্যের ক্ষমা পর্ষদ (Pardons Board) গঠন করা হবে।
৯. ক্ষমার আগে মুফতির মতামত : চতুর্থ ভাগ (A) , অনুচ্ছেদ-৮ (A)-এর ধারা-৫-এ বলা হয়েছে, কোনো বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার আগে ক্ষমা বোর্ড প্রযোজ্য আইন বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ইসলামী আইনের যেকোনো দিক সম্পর্কে মুফতি কিরাজান প্রদত্ত লিখিত মতামত বিবেচনা করবে।
১০. মুরতাদ আইন পরিষদের সদস্য হবে না : সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৩০-এর ধারা (E) -তে বলা হয়েছে, শরয়ি আইন অনুসারে কোনো মুরতাদ (ধর্মদ্রোহী) আইন পরিষদের সদস্য হতে পারবে না।
১১. ইসলামবিরোধী বিল উত্থাপন নয় : সপ্তম ভাগ, অনুচ্ছেদ-৪২-এর ধারা-১-এর উপধারা (E) -তে বলা হয়েছে, আইন পরিষদে এমন কোনো বিল, প্রস্তাব, সংশোধনী ও আলোচনা উত্থান করা যাবে না, যা জাতীয় দর্শন মালয় ইসলামিক মোনার্কির পরিপন্থী।
১২. আইন পরিষদে ধর্মবিরোধী আলোচনা নয় : সপ্তম ভাগ, অনুচ্ছেদ-৫৩-এর ধারা-১এ-এর উপধারা (A) -তে বলা হয়েছে, আইন পরিষদের কোনো সদস্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জাতীয় দর্শন মালয় ইসলামিক মোনার্কির পরিপন্থী কোনো বক্তব্য প্রদান বা মন্তব্য করতে পারবে না।
১৩. জাকাত ফান্ড কর আইনের অধীন নয় : অষ্টম ভাগ, অনুচ্ছেদ-৬৯-এ বলা হয়েছে, এই অংশের বিধানগুলো (কর সংক্রান্ত) ‘মুসলিম রেভিনিউজ অ্যান্ড ফান্ডস’-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সম্ভবত এর দ্বারা ধারা ও ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্দেশ্য।
১৪. স্পর্শকাতর দপ্তরে কেবল মুসলিম নিয়োগ : একাদশ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৮৪ -তে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের অনুসারী, মালয় জাতি ও ব্রুনেই দারুসসালামের নাগরিক না হলে তাকে তৃতীয় তফসিলে নির্দিষ্ট কোনো অফিসে নিয়োগ দেওয়া হবে না। তৃতীয় তফসিলে ১০টি দপ্তরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো—১. মহাহিসাব রক্ষক, ২. উপদেষ্টা পর্ষদ কর্মকর্তা, ৩. আইন পরিষদ কর্মকর্তা, ৪. প্রধান শরিয়া বিচারপতি, ৫. মুফতি কিরাজান, ৬. প্রধান আইন কর্মকর্তা, ৭. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, ৮. আদত ইস্তিদাত তথা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক দপ্তর, ৯. আইন পরিষদের স্পিকার ও ১০. মন্ত্রিপরিষদসচিব।
১৫. ইন্টারপ্রিটেশন ট্রাইব্যুনালে ইসলামী আইনজ্ঞ নিয়োগ : দ্বাদশ ভাগ, অনুচ্ছেদ-৮৬-এর ধারা-৭, উপধারা (C) -তে বলা হয়েছে, ইন্টারপ্রিটেশন ট্রাইব্যুনাল তিন সদস্যের হবে, যার একজন হবেন এমন একজন, যার ইসলামী আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে অথবা যিনি ইসলামী আইন ও বিচার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন। এই ব্যক্তি যেকোনো দেশের নাগরিক হতে পারবেন।
১৬. আল্লাহর নামে শপথ : সংবিধানের তফসিল-১-এ উপদেষ্টা পরিষদ, উপদেষ্টা পর্ষদ কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপরিষদসচিব, মন্ত্রিপরিষদ, আইন পরিষদের সদস্য ও আইন পরিষদ কর্মকর্তাদের শপথের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে মুসলিম সদস্য ও কর্মকর্তাদের জন্য আল্লাহর নামে শপথ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যার আরবি উচ্চারণ হলো, ‘ওয়াল্লাহি ওয়া বিল্লাহি ওয়া তাল্লাহি’।
১৭. দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি : আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার মাধ্যমে সংবিধানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি সব প্রশংসার অধিকারী, যার নামগুলো সমুন্নত, যিনি সকল বাদশাহর বাদশাহ, তিনি তার রহমতের ধারা অব্যাহত রাখুন; তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন, তিনি এই সংবিধানের প্রতি চিরকালের জন্য অনুগ্রহ বর্ষণ করুন। কবুল করুন হে বিশ্বজগতের পালনকর্তা!’
১৮. অন্যান্য : সংবিধানের প্রথম ভাগে অনুচ্ছেদ-৭৭-এর আলোকে ‘দ্য রিলিজিয়াস কাউন্সিল অ্যান্ড কাদিস কোর্টস অ্যাক্ট’-এর অধীনে মুফতি কিরাজান নিয়োগ এবং ‘মুসলিম রেভিনিউজ অ্যান্ড ফান্ডস’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। ৭৭ অনুচ্ছেদে ইসলামী আদালত গঠন, ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও জাকাত ব্যবস্থাপনার ওপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্রুনেইয়ের সংবিধানের সংশোধিত সংস্করণ ২০১১ অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ, বন্দর সেরি বেগাওয়ান, ব্রুনেই। ছবি: সংগৃহীত